বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাবজেক্টের রিভিউ

নুর নওশাদ

ভাষা হিসেবে বাংলা ‘ভাষা’ হলেও বিষয় হিসেবে বাংলা মূলত ‘সাহিত্য’। কিন্তু বাংলা পড়লে ভাষাও শেখানো হয়। বাংলাদেশের প্রত্যেকটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হয়। বাংলা হলো এমন একটি বিষয় যেটিতে আপনি ইতিহাস, দর্শন, রাজনীতি, সমাজতত্ত্ব, মনোবিজ্ঞান, রাষ্ট্রবিজ্ঞান সহ অনেগুলো বিষয়ের স্বাদ পাবেন। বাংলাতে আপনাকে অনেক অনেক ব্যাকরণ শেখানো হবে এমনটা মোটেও নয়। এখানে মূলত পড়ানো হবে সাহিত্য। প্রাচীন থেকে আধুনিক যুগের সাহিত্য অধ্যয়নের মাধ্যমেই আপনি পাবেন উল্লেখিত বিষয়গুলো সম্পর্কে বিস্তর ধারণা। সেই সাথে সাহিত্য রস আপনার কল্পনাকে করবে বিস্তৃত।

বিষয়গত প্রকৃতিতে বাংলা

অনেকে বলে বাংলা কঠিন বিষয়। আসলে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন বিষয়ই সহজ না। তবে বাংলাতে একটু বেশি পরিশ্রম লাগে। তবে এতে মজাও আছে।আছে অনেক নতুন কিছু জানার সুযোগ। বিষয়টিতে সহজ কোর্স যেমন আছে তেমনি কয়েকটি কঠিন কোর্সও আছে অন্যান্য বিষয়গুলোর মতো। তবে ঠিকমত আগ্রহসহকারে অধ্যয়ন করলে বাংলা এতো কঠিন মনে হবে না।

বাংলাতে কী পড়ানো হয়?

শুরুতেই বলেছি বাংলা সাবজেক্টে ব্যাকরণ অপেক্ষা সাহিত্য বেশি পড়ানো হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদাহরণ যদি দিই,
এখানে প্রথম ও চতুর্থ বর্ষে শুধু দুইটি কোর্সে ব্যাকরণ এর বিষয়গুলো পড়ানো হয়। এছাড়া প্রথম দুই বছরে অনুষঙ্গী কোর্স হিসেবে দর্শন, সাংবাদিকতা, সমাজতত্ত্ব, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি, ইতিহাস পড়ানো হয়। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে সিলেবাস অনুধ্যায়ী আরো অনেক অনুষঙ্গী বিষয় থাকে। এছাড়া বাকি যা আছে সবই সাহিত্য।

বাংলা পাঠ্য
কিছু বাংলা পাঠ্য

উপন্যাস, মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক সাহিত্য, ছোটগল্প, সাহিত্যের ইতিহাস, চর্যাপদ, মধ্যযুগের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন, মঙ্গলকাব্য, বৈষ্ণব কবিতা, শ্রীচৈতন্য, প্রণয় উপাখ্যান, মৈমনসিংহ গীতিকা, দোভাষী পুঁথি, নাটক, প্রবন্ধ, সাহিতের ধারা, অধুনিক কবিতা, কবিতার ছন্দ-অলংকার-ভাববস্তু এই সবকিছুই বিশ্লেষণ সহকারে পড়তে হয়। প্রাচীন ভারতীয় রসতত্ত্ব এবং আধুনিক বিদেশি সাহিত্যের কিছু অনুবাদও পড়ানো হয়।

বাংলায় উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ?

বাংলায় উচ্চশিক্ষায় সুযোগ
বাংলায় উচ্চশিক্ষায় সুযোগ

বাংলায় উচ্চশিক্ষার জন্য বা গবেষণার জন্য বাংলাদেশ ব্যতীত উপযুক্ত স্থান কোথায় আর আছে। বাংলায় পড়ে উচ্চ শিক্ষার জন্য অনেকে পার্শ্ববর্তীদেশ ভারতে গিয়ে থাকেন। তবে উচ্চ শিক্ষার জন্য অন্যান্য দেশে যাওয়ার এবং ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ক বিষয় নিয়ে গবেষণা করার অনেক সুযোগ আছে। আর বাংলায় পড়ে এখন অনেকে ভালো সিজিপিএ অর্জন করতে পারছে যেটি উচ্চশিক্ষায় সহায়ক।

ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ

শিক্ষতায় ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ
শিক্ষতায় ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ

স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সব ক্ষেত্রেই বাংলা আছে।তাই শিক্ষকতা পেশার জন্য বাংলার শিক্ষার্থীদের সবখানেই সুযোগ আছে । মৌলিক বিষয় হিসেবে তাই শিক্ষা ক্যাডারে সুযোগটা বাংলা বিভাগের তো রয়েছেই।

সাংবাদিকতা পেশাতেও বাংলার শিক্ষার্থীরা ভালো করে থাকেন। দেশের অনেক নামকরা সাংবাদিক বাংলা থেকে পাশ করে সাংবাদিকতাকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন। এছাড়াও, সংবাদ সম্পাদনাসহ বিভিন্ন সম্পাদনা ও অনুবাদ এর জন্য বাংলার শিক্ষার্থীদের চাহিদা আছে।
এছড়া প্রকাশনা ও প্রুফ রিডার হিসেবেও কাজের সুযোগ থাকে।

উপস্থাপনায় ক্যারিয়ার করার সুযোগ (মডেল- বোরহান উদ্দীন)
উপস্থাপনায় ক্যারিয়ার করার সুযোগ (মডেল- বোরহান উদ্দীন)

বিভিন্ন নান্দনিক পেশা- অনুষ্ঠান ও সংবাদ উপস্থাপনা উপস্থাপনা, আবৃত্তি, লেখালেখি, ভাষা প্রশিক্ষণ এই ধরণের কাজ বাংলার শিক্ষার্থীরা করে থাকেন।

বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি ব্যাংক-বিমা-এনজিও এইসকল ক্ষেত্রে চাকরির জন্য যেকোন বিষয় থেকেই আবেদন করা যায়। এনজিও গুলোতে মানবিক এর বিষয় হিসেবে বাংলাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।

বিসিএস পরীক্ষায় বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা খুব ভালো করেন। কেননা বাংলার উপরেই বিসিএসএর একটা বিরাট মার্কস থাকে। বিসিএস এর বিভিন্ন ক্যাডারে বাংলার শিক্ষার্থীরা সার্ভিস দিচ্ছেন। এছাড়াও সকল সরকারি চাকরিতে বাংলার শিক্ষার্থীরা আবেদন করতে পারে এবং অনেকেই সরকারি দপ্তরগুলোতে আমলা হিসবে কাজ করছে।

বাংলায় পড়ুয়া বেশ কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ

আসুন জেনে নেই বাংলায় পড়ুয়া দেশনন্দিত কিছু মানুষের সম্পর্কে-

শেখ হাসিনা- প্রধানমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ

শেখ হাসিনা- প্রধানমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ
শেখ হাসিনা- প্রধানমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান- সাবেক জাতীয় অধ্যাপক, ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান- সাবেক জাতীয় অধ্যাপক
অধ্যাপক আনিসুজ্জামান

অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম- জাতীয় অধ্যাপক

অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম- জাতীয় অধ্যাপক
অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম

অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ- প্রতিষ্ঠাতা, বিশ্ব সাহিত্যকেন্দ্র

অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ
অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ

হুমায়ূন আজাদ- লেখক ও সাবেক অধ্যাপক

হুমায়ূন আজাদ- লেখক ও সাবেক অধ্যাপক
হুমায়ূন আজাদ

বেবি মওদুদ- সাবেক সাংসদ, সাংবাদিক, লেখক, রাজনীতিবিদ

বেবি মওদুদ
বেবি মওদুদ

সেলিনা হোসেন – সাহিত্যিক ও বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান

সেলিনা হোসেন

শওকত আলী- কথাসাহিত্যিক

শওকত আলী- কথাসাহিত্যিক
শওকত আলী

জাহানারা ইমাম- শহীদ জননী, লেখিকা, কথাসাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ

জাহানারা ইমাম

গোলাম সরওয়ার- সাবেক সম্পাদক, সমকাল

গোলাম সরওয়ার
গোলাম সরওয়ার

মোস্তফা জব্বার- টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী, বিজয় কিবোর্ড এর সত্ত্বাধিকারী

মোস্তফা জব্বার
মোস্তফা জব্বার

মোহাম্মদ সাদিক- পাব্লিক সার্ভিস কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান

মোহাম্মদ সাদিক
মোহাম্মদ সাদিক

নির্মলেন্দু গুণ – কবি

নির্মলেন্দু গুণ
নির্মলেন্দু গুণ

হেলাল হাফিজ- কবি

ময়ুখ চৌধুরী- কবি

মহাদেব সাহা- কবি ও সাংবাদিক

আখতারুজ্জামান ইলিয়াস – কথাসাহিত্যিক

মহীবুল আজিজ- কথাসাহিত্যিক

ড.মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ- দেশবরেণ্য শিক্ষাবিদ

আব্দুল হাই- ভাষাবিজ্ঞানী, লেখক ও অধ্যাপক

আহমদ শরীফ- ভাষাবিদ, সাহিত্য সমালোচক, অধ্যাপক

মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী -প্রবন্ধকার, শিক্ষাবিদ, গবেষক, বুদ্ধিজীবী

আনোয়ার পাশা- লেখক ও অধ্যাপক, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ

ড.মোহাম্মদ এনামুল হক- ভাষাবিদ

আলাউদ্দিন আল আজাদ- ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, কবি, নাট্যকার, গবেষক

বিশ্বজিৎ চৌধুরী- সাংবাদিক, প্রথম আলো

সৈয়দ আলী আহসান- সাবেক জাতীয় অধ্যাপক

আবু হেনা মোস্তফা কামাল- শিক্ষাবিদ ও লেখক
হরিশংকর জলদাস- একুশে পদক প্রাপ্ত সাহিত্যিক

অধ্যাপক শিরীণ আখতার- উপাচার্য, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

অধ্যাপক শিরীণ আখতার
অধ্যাপক শিরীণ আখতার

অধ্যাপক রফিকুল্লাহ খান-উপাচার্য, শেখ হাসিনা বিশ্ববিদ্যালয়, নেত্রকোনা।

2 thoughts on “বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাবজেক্টের রিভিউ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *