এশার নামাজ কয় রাকাত – এশার নামাজের নিয়ম

এশার নামাজ (আরবি: صلاة العشاء; সালাতুল ইশা) সকল মুসলমানদের জন্য অবশ্য পালনীয় বা ফরজ দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের অন্যতম। নামাজ বা সালাত ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম। যদি মধ্যরাত থেকে দিন গণনা করা হয়,তাহলে দৈনিক নামাজগুলোর মধ্যে এশার নামাজ পঞ্চম। এশার নামাজ আদায় করলে অর্ধেক রাত ইবাদত করার সওয়াব লাভ হয়। এ জন্য বিভিন্ন হাদিসে ফজিলত বর্ণনার পাশাপাশি বিশেষভাবে উৎসাহিত ও করা হয়েছে।
এশার নামাজ মোট ১০ রাকাত। এর মধ্যে চার রাকাত সুন্নত, চার রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নত। অনেকে এর পরে দুই রাকাত নফল নামাজ ও আদায় করেন। এশার নামাজের প্রথম চার রাকাত সুন্নত নামাজের দলিল তেমন স্পষ্ট ভাবে পাওয়া যায় না তবে এটি আদায় করলে ভালো। আদায় না করলে গুনাহ হবে না। আর ফরজ নামাজ অত্যাবশ্যকীয়। এটা কোনোভাবেই বাদ দেয়া যাবে না। আর শেষের দুই রাকাত সুন্নত নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটিকে সুন্নতে মুয়াক্কাদা বলা হয়।

এশার নামাজের সময়

এশার ফরজ নামাজ চার রাক্বাত। এটি রাতে আদায় করা হয়। মাগরিবের নামাজের সময় অতিবাহিত হওয়ার পর এশার নামাজের সময় শুরু হয়। রাতের তিনের এক ভাগ সময় হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত পড়া সর্বোত্তম, দুই তৃতীয়াংশ পর্যন্ত জায়েজ এবং সুবহে সাদিকের আগ(এটাকে মাকরুহ ও অনুত্তম সময় বলা হয়) পর্যন্ত পড়া যায়।

এশার নামাজের উত্তম সময়

রাতের এক-তৃতীয়াংশ সময়ের শেষের দিকে এশার নামাজ পড়া উত্তম। এর মানে হলো এশার সময় হওয়ার সোয়া এক থেকে দেড় ঘণ্টা পরে এশার নামাজ পড়া। (আল-বাহরুর রায়েক : ১/৪৩০)

এশার নামাজের নিয়ত

এশার নামাজের নিয়তসমূহ জানতে হলে আমাদের এর ৪ রাকাত সুন্নত, ৪ রাকাত ফরজ ও ২ রাকাত সুন্নত ও ২ রাকাত নফল সবগুলোর নিয়তই জেনে রাখা ভালো।

এশার নামাজের ৪ রাকাত সুন্নত নামাজের নিয়ত

এশার নামাজের ৪ রাকাত সুন্নত নামাজের নিয়ত নিচে দেয়া হলো-

এশার চার রাকাত সুন্নাত নিয়ত
এশার চার রাকাত সুন্নাত নিয়ত

উচ্চারণ-
“নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা আরবাআ রাকয়াতাই সালাতিল এশাই সুন্নাতু রাসূলিল্লা-হি তা’আলা মুতাওয়াজ জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।”

এর বাংলা অর্থ-
“এশার চার রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করার উদ্দেশ্যে কিবলামুখী হয়ে নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবার।”

এশার নামাজের ৪ রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ত

এশার নামাজের ৪ রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ত নিচে দেয়া হলো-

এশার চার রাকাত ফরজের নিয়ত
এশার চার রাকাত ফরজের নিয়ত

উচ্চারণ-
“নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা আরবাআ রাকয়াতাই সালাতিল এশাই ফারদুল্লাহি তা’আলা মুতাওয়াজ জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।”
বি:দ্র- ইমামের পেছনে পড়লে “ফারদুল্লাহি তা’য়ালা” বলার পরে “ইকতাদাইতু বিহা-যাল ইমাম” পড়তে হবে।

এর বাংলা অর্থ-
“এশার চার রাকাত ফরজ নামাজ আদায় করার উদ্দেশ্যে কিবলামুখী হয়ে নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবার।”

এশার নামাজের ২ রাকাত সুন্নত নামাজের নিয়ত

এশার নামাজের ২ রাকাত সুন্নত নামাজের নিয়ত নিচে দেয়া হলো-

এশার দুই রাকাত সুন্নাতের নিয়ত
এশার দুই রাকাত সুন্নাতের নিয়ত

উচ্চারণ-
“নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা রাকয়াতি সালাতিল এশাই সুন্নাতু রাসূলিল্লা-হি তা’আলা মুতাওয়াজ জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।”

এর বাংলা অর্থ-
“এশার দুই রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করার উদ্দেশ্যে কিবলামুখী হয়ে নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবার।”

এশার নামাজের ২ রাকাত নফল নামাজের নিয়ত

এশার নামাজের ২ রাকাত নফল নামাজের নিয়ত নিচে দেয়া হলো-

এশার দুই রাকাত নফলের নিয়ত এর ছবি
এশার দুই রাকাত নফলের নিয়ত

উচ্চারণ-
“নাওয়াইতু আন্ উসাল্লিয়া লিল্লাহি তা’আলা রাকয়াতি সালাতিল নফলে মুতাওয়াজ জিহান ইলা জিহাতিল কা’বাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।”

এর বাংলা অর্থ-
“এশার দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করার উদ্দেশ্যে কিবলামুখী হয়ে নিয়ত করলাম, আল্লাহু আকবার।”

এশার নামাজের নিয়ম

এশার ফরজ বা আবশ্যিক নামাজ হলো ৪ রাকাত, যা প্রত্যেক মুসলমানকেই পড়তে হবে। ফরজ নামাজ এর পূর্বে ৪ রাকাত সুন্নাত নামাজ রয়েছে। এটি ঐচ্ছিক নামাজ (সুন্নাতে যায়েদা বা গায়েরে সুন্নাত এ মুয়াক্কাদাহ ও বলা হয়ে থাকে)। এই নামাজ পড়তে উৎসাহিত করা হয়েছে এবং সময় থাকলে পড়া উচিত। তবে না পড়লে গুনাহ হবে না।

এশার চার রাকাত সুন্নত নামাজের নিয়ম

প্রথমেই ওজু করে পাকপবিত্র হয়ে কিবলামুখি করে জায়নামাজে দাঁড়াতে হবে।
তারপর নিয়ত পড়ে নিতে হবে।
এরপর “আল্লাহু আকবার” বলে দুই হাত কাঁধ বরাবর উঠিয়ে বুকে হাত বাঁধতে হবে।
এরপর সানা পাঠ করতে হবে।

সানা- “সুবহানাকা আল্লাহুম্মা বিহামদিকা ওয়াতা ওয়া রাকাসমুকা ওয়া তায়ালা জাদ্দুকা ওয়া লা-ইলাহা গাইরুক”

সানা
সানা

সানা পড়ার পর সূরা ফাতিহা পাঠ করে সাথে যেকোনো একটি সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে।
এরপর “আল্লাহু আকবার” বলে রুকুতে যেতে হবে। রুকুতে গিয়ে “সুবহানা রব্বিয়াল আযিম” পাঠ করতে হবে ৩ বার বা ৫ বার। “সামি আল্লাহু লিমান হামিদাহ্” বলে রুকু থেকে উঠে “রব্বানা লাকাল হামদ” বলে তারপর সিজদায় যেতে হবে। সিজদায় গিয়ে “সুবহানা রব্বিয়াল আ’লা” পড়তে হবে ৩ বার বা ৫ বার।
এরপর সিজদাহ থেকে উঠে পুনরায় সিজদায় গিয়ে একই ভাবে তাসবিহ পাঠ করতে হবে। এভাবে প্রথম রাকাত শেষ হবে।
একই নিয়মে দ্বিতীয় রাকাত আদায় করতে হবে।
দ্বিতীয় রাকাতের শেষে সিজদাহ থেকে উঠে বসে তাশাহুদ পাঠ করতে হবে।

তাশাহুদ বা আত্তাহিয়াতু বাংলা উচ্চারণ

“আত্তাহিয়াতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত তায়্যিবাতি আসসালামুয়ালাইকা আয়্যুহান নাবিয়্যু ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ্। আসসালামুয়ালাইনা আ’লা ইবাদিল্লাহিস সুয়ালিহিন, আশহাদু আল্লাহ ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রসূলুহ্”

তাশাহুদ
তাশাহুদ

উল্লেখ্য “আশহাদু আল্লাহ ইলাহা” বলার সময় ডান হাতের শাহাদাত আঙ্গুল উত্তোলন করতে হবে।
এরপর আবার উঠে গিয়ে বাকি দুই রাকাত আদায় করতে হবে।
শেষ বৈঠকে তাশাহুদ ও দরূদ শরীফ পাঠ করতে হবে।

দরূদ শরীফ বাংলা উচ্চারণ

দুরুদ
দুরুদ

“আল্লাহুম্মা সল্লিয়ালা মুহাম্মাদ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ কামা সল্লাইতা আলা ইব্রাহীম ওয়ালা আলি ইব্রাহীম ইন্নাকা হামিদুম্মাজিদ। আল্লাহুম্মা বারিক আলা মুহাম্মাদ ওয়ালা আলি মুহাম্মাদ কামা বারতকা আলা ইব্রাহীম ওয়ালা আলি ইব্রাহীম ইন্নিকা হামিদুম্মাজিদ।”

এরপর দোয়া মাসুরা পড়তে হবে।

দোয়া মাসুরা বাংলা উচ্চারণ

“আল্লাহুম্মা ইন্নী যালামতু নাফসী যুলমান কাসিরাঁও ওয়ালা ইয়াগফিরুয্ যুনুবা ইল্লা আন্তা ফাগফিরলী মাগফিরাতাম মিন ইন্দীকা ওয়ার হামনী ইন্নাকা আন্তাল গাফুরুর রাহীম।”
এরপর সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে।
এভাবে এশার চার রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করতে হবে।

এশার চার রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ম

উপরোক্ত সুন্নত নামাজের মতোই এই ফরজ নামাজ আদায় করতে হয়।
তবে এদের মধ্যে ভিন্নতা হলো নিয়তে। ফরজ নামাজের শুরুতে ফরজ নামাজের নিয়ত পড়ে নিতে হবে।
এছাড়াও ফরজ নামাজের শেষ দুই রাকাতে সূরা ফাতিহার সাথে কোনো সূরা মিলাতে হবে না।
এছাড়া একই নিয়মে শেষ বৈঠকে তাশাহুদ, দরূদ শরীফ ও দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে।
ফরজ অংশটি ইমামের নেতৃত্বে জামাতের সাথে আদায় করলে উত্তম কেননা জামাতের সাথে পড়লে সাতাশ গুন বেশি সওয়াব হবে। তবে একান্তই যদি কোনো অসুবিধা হয় তবে নিজে নিজে পড়ে নেয়া যাবে। এশার নামাজ আদায় সম্পর্কে বিভিন্ন হাদিস রয়েছে। রাসূল (সা) বলেছেন, “যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে এশার নামাজ আদায় করল, সে যেন অর্ধেক রাত পর্যন্ত (নফল) নামাজ আদায় করল।” (সহীহ মুসলিম: ১৩৭৭)

এশার দুই রাকাত সুন্নত নামাজের নিয়ম

ফরজ ৪ রাকাত নামাজের পর ২ রাকাত সুন্নাত নামাজ পড়তে হয় এবং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত (সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ) এবং নবীজী হযরত মুহাম্মদ (সা) তার জীবদ্দশায় এটি কখনো ছাড়েননি। সুন্নত নামাজের নিয়ত পড়ে এই নামাজ শুরু করতে হবে।
উপরোক্ত নিয়মে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতে হবে।
দুই রাকাতেই সুরা ফাতেহার সাথে অন্য সূরা মিলিয়ে পড়তে হবে।
শেষ বৈঠকে তাশাহুদ,দরূদ শরীফ ও দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করতে হবে।
এভাবে দুই রাকাত সুন্নত নামাজ আদায় করতে হয়।একই নিয়মে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়তে হয়।

তারপর, কেউ কেউ ২ রাকাত নফল নামায পড়ে থাকেন যার কোন দলিলিক ভিত্তি পাওয়া যায়না। আসলে উল্লেখ্য, নফল নামাজসমূহ নিষিদ্ধ সময় ব্যতীত দিনরাতের যেকোন সময় পড়া যায়। শুধু যে ২ রাকাতই পড়তে হবে, ব্যপারটা তেমন নয়।

বিতরের নামাজ

বিতর
বিতর

ফরজ ও সুন্নাতের পরের নামাজটি হল বিতরের নামাজ। তবে এই নামাজের সাথে এশার নামাজের কোন সম্পৃক্ততা নেই। এটা ঘুম থেকে শেষ রাতে উঠে তাহাজ্জুদ নামাযের পর পড়া উত্তম। তবে যারা ঠিকমত ঘুম থেকে জাগতে পারেন না, তাদের জন্য ঠিক হবে এশার নামাজের পরপরই পড়ে ফেলা। হাদিস অনুযায়ী বিতরের নামাজ ১ রাকাত, ৩ রাকাত, ৫ রাকাত, ৭ রাকাত পড়া যায়।
মুসাফির অবস্থায় থাকলে ইসলামের বিধান অনুযায়ী ইশা’র চার রাকাত ফরজকে সংক্ষিপ্ত করে দুই রাকাত আদায় করতে হয়। তারপর শুধুমাত্র বিতর নামাযটি আদায় করতে হয়।

এশার নামাজ কখন মাকরুহ হবে

বিশেষ কোনো প্রয়োজন ছাড়া মধ্যরাতের পর এশা পড়লে সেটি মাকরুহ হয়ে যাবে। রোগীর সেবা শরিয়ত অনুমোদিত একটি প্রয়োজনের মধ্যে গণ্য হতে পারে। কিন্তু ওয়াজ মাহফিলকে প্রয়োজনের মধ্যে গণ্য করা যাবে না। সেইজন্য ওয়াজ মাহফিলের সময়ও যথাসময়ে এশার নামাজ আদায় করাটা জরুরি। (আল-বাহরুর রায়েক : ১/৪৩১)

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *