আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বা আইআর সাবজেক্টের রিভিউ

সোহানূর রহমান শুভ

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বা আইআর এখন বিশ্ববিদ্যালয় সদ্য ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশ পছন্দের একটি বিষয়।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং পছন্দের শীর্ষে থাকা যে ক’টি বিভাগ রয়েছে ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক’ বিভাগ তন্মধ্যে অন্যতম। এজন্যই দেখা যায় শিক্ষার্থীরা আন্তজার্তিক সম্পর্ক বিষয়টিকে তাদের চয়েজ লিস্টের উপরের দিকে রাখেন। সব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়টির কোর্সগুলো মোটামুটি কাছাকাছি ধরনেরই হয় বলা চলে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘আন্তর্জাতিক সম্পর্ক’ বিভাগে ৪ বর্ষের স্নাতক সম্পন্ন করার জন্য আপনাকে সম্ভাব্য যেসকল কোর্সগুলো নিয়ে পড়াশোনা করতে হবে সে-সম্পর্কে একটি ধারণা আপনাদেরকে দিচ্ছি –

আইআরের কোর্সসমূহ

১ম বর্ষ –

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মৌলিক ধারণা;

পৃথিবীর ইতিহাস;

আন্তর্জাতিক আইন;

গণমাধ্যম এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক; বাংলাদেশের ইতিহাস,

রাজনীতি এবং ঐতিহ্য;

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের মৌলিক ধারণা;

সমাজতত্ত্বের মৌলিক ধারণা এবং

ইংরেজি ভাষা শিক্ষা (ঐচ্ছিক)।

২য় বর্ষ –

১৯১৪ সাল থেকে সমসাময়িক সময় পর্যন্ত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক;

কূটনীতি;

ভূ-রাজনীতি;

মানবাধিকার;

উদ্বাস্তু, অভিবাসী বিষয়ক কোর্স;

জেন্ডার স্টাডিজ এবং

অর্থনীতির মৌলিক ধারণা।

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে কিছু বই
আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে কিছু বই

৩য় বর্ষ –

আন্তর্জাতিক সম্পর্কের তত্ত্বসমূহ;

পররাষ্ট্রনীতি বিশ্লেষণ;

পরিবেশ রাজনীতি;

গুণগত সামাজিক গবেষণা;

বিশ্বায়নের রাজনীতি;

জাতিগত বৈশিষ্ট্য এবং জাতীয়তাবাদ
এবং

স্ট্র‍্যাটেজিক স্টাডিজ।

৪র্থ বর্ষ –

ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজের মৌলিক ধারণা;

শান্তি এবং সংঘর্ষ শিক্ষা;

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি;

বিশ্ব রাজনীতিতে ধর্ম এবং মতাদর্শসমূহ; পরিমাণগত সামাজিক গবেষণা;

আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ
এবং

সমুদ্রবিষয়ক সম্পর্কসমূহ।

[উল্লেখ্য, মৌলিক কোর্সগুলো বাদে আনুষঙ্গিক কোর্সগুলোর বিষয়াবলি পরিবর্তনযোগ্য। তাছাড়া বিভিন্ন বর্ষের কোর্সগুলোও একেক বর্ষের মধ্যে ইন্টারচেঞ্জ হতে পারে]

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কেনো পড়বেন?

এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে আমাদের চলে যেতে হবে আদি এবং মূল প্রশ্নে। পড়াশোনা কেনো করবেন? – জ্ঞানার্জনের জন্যে। পড়াশোনার মূল উদ্দেশ্যই এটি৷ ঠিক তেমনিভাবে আন্তর্জাতিক সম্পর্কও পড়বেন জ্ঞানার্জনের জন্যে। আর যেহেতু আপনি ইতিমধ্যে জেনে গিয়েছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্কে কোন কোন বিষাবলিতে জ্ঞানার্জন সম্ভব সেক্ষেত্রে আপনার সিদ্ধান্ত নেয়াটা আরো সহজ হয়ে পড়বে আশা করি। জ্ঞানার্জনের জন্য ব্যক্তিগত কৌতুহল এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা – এ দুটিকে আমলে নেয়া প্রয়োজন। আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও কৌতুহলের খোরাক যদি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ মেটাতে পারে তবেই এটিকে অন্তর্ভুক্ত করুন আপনার পছন্দের তালিকায়।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার সাথে সাথে যে আরো একটি প্রশ্নের উত্থান হয় সেটি হচ্ছে –

আন্তর্জাতিক সম্পর্কে পড়াশোনা করে ক্যারিয়ার কীভাবে গড়ে তুলবো?

ক্যারিয়ার সবসময়ই বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের সাবজেক্ট চয়েজের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের বিষয়গুলোর কোনোটিরই সুনির্দিষ্ট জব সেক্টর নেই। তবে এরফলে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। সুনির্দিষ্ট জব সেক্টর না থাকায় আপনার হাতে থাকছে অবারিত সুযোগ। আন্তর্জাতিক সম্পর্কে পড়াশোনা করলে বেশ কিছু ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাওয়ারও সুযোগ রয়েছে। যেমন Bangladesh Civil Service বা বিসিএস পরীক্ষায় আপনি থাকবেন অনেকের চেয়ে এগিয়ে। কেননা BCS preliminary examination এর ২৫% প্রশ্নই থাকছে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত। এরপর মূল পরীক্ষায়ও পাচ্ছেন ৩৩% এর অধিক প্রশ্ন আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সাথে সম্পর্কিত বিষয়সমূহের উপর! পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কাজ করার স্পৃহা আন্তর্জাতিক সম্পর্কে পড়াশোনার করার মাধ্যমে অনেকের মূল স্বপ্ন হিসেবে গড়ে উঠে। এটিকে পূর্ণতা দেয়া সম্ভব BCS (Foreign Affairs) এর প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। আর এক্ষেত্রে আপনি যে অন্যান্য অনেকের চেয়ে এগিয়ে থাকছেন সে তো বলাই বাহুল্য।

আইআর এ ক্যারিয়ার
আইআর এ ক্যারিয়ার

বিভিন্ন NGO (Non-governmental Organisations), IGO (Intergovernmental Organisations), MNC (Multi-national Corporations) তে যোগদানের জন্য যেসকল দক্ষতা ও পড়াশোনার প্রয়োজন সেসব কিছুর সুযোগও পাচ্ছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে। তবে এ বিষয়গুলো নিয়েও আরো বিস্তর আলোচনার প্রয়োজন আছে। সেসব নিয়ে কথা হবে অন্য কোনো দিন।

উচ্চশিক্ষা, গবেষণা এবং প্রাসঙ্গিকতা

উচ্চশিক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সম্পর্কই হতে পারে আপনার জন্য একটি যথাযোগ্য প্ল্যাটফর্ম। গবেষণাভিত্তিক উচ্চশিক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক সম্পর্ক একটি উর্বর ভূমি। ইতিহাস, সমসাময়িক বিশ্ব রাজনীতি, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাকে সামনে রেখে পররাষ্ট্রনীতি বাস্তবায়ন, অভিবাসন সমস্যার সমাধান, পরিবেশ, গণমাধ্যম – কী নেই এখানে?

তাছাড়া বর্তমান বিশ্বে প্রতিটি দেশই একে অপরের উপর নির্ভরশীল। প্রাচীন এবং মধ্যযুগে একেকটি বিশাল রাজ্য স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিলো, যার ফলে অন্য রাজ্যের সাথে সংযোগ স্থাপনের প্রয়োজনীয়তাও ছিলো নগন্য। কিন্তু বর্তমান বিশ্ব আর এমনটি নেই। প্রতিটি রাষ্ট্রই কোনো না কোনোভাবে অন্য রাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল। বাণিজ্য, নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যসেবা ইত্যাদি অভ্যন্তরীণ বিষয়াদির জন্যেও আজ সঠিক পররাষ্ট্রনীতি গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে আশা করি বুঝতেই পারছেন উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের জন্য আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা ও উচ্চতর শিক্ষার সুযোগের ক্ষেত্র কতটা বিস্তৃত। উন্নত দেশগুলোতে এসকল ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষার সুযোগ এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কে শিক্ষিত ব্যক্তিত্ব এ দু’টোরই চাহিদা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

আইআরের প্রাসঙ্গিকতা

এক্ষেত্রে একটি কথাই বলবো, পৃথিবীতে যতদিন রাষ্ট্রের ধারণা টিকে থাকবে ততদিন আন্তর্জাতিক সম্পর্কও তার প্রাসঙ্গিকতা হারাবে না।

2 thoughts on “আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বা আইআর সাবজেক্টের রিভিউ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *