প্রমিত তালুকদার রুদ্র
ও’ কারা কোরান, বেদ, বাইবেল চুম্বিছে মরি’ মরি’
ও’ মুখ হইতে কেতাব গ্রন্থ নাও জোর ক’রে কেড়ে,
যাহারা আনিল গ্রন্থ-কেতাব সেই মানুষেরে মেরে,
পূজিছে গ্রন্থ ভন্ডের দল! মূর্খরা সব শোনো,
মানুষ-কাজী নজরুল ইসলাম।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার অসংখ্য গ্রন্থে গেয়েছেন সাম্যের গান, গেয়েছেন মানুষের গান, গেয়েছেন নিপীড়িতের গান। ছোটবেলা থেকেই চরম অভাব আর দুঃখকে উপলব্ধি করেছেন বলেই হয়তো সে হয়ে উঠেছেন বিদ্রোহী। কবি কখনো চিরদূর্দম, দুর্বিনীত, নৃশংস, আবার কখনো সে আর্ফিয়াসের বাসুরি।
কখনো সে চেঙ্গিস কখনো সে বেদুঈন। কবি এতটাই সাম্য কেন্দ্রিক যে সে শত্রুর সাথে গলাগলি করে আবার সে তার আত্মবিশ্বাসের জন্য মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা ধরে।
আজ এই মহান পুরুষ, বাংলাদেশের জাতীয় কবি, কাজী নজরুল ইসলামের ১১২ তম জন্মদিন। তার এই জন্মতিথিতে তার প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা।
শেষ লাইন অনুসারে অনেকের মনে হতে পারে এসব লাইন শুধু কবিতায়ই মানায়। কিন্তু, কবির কবিতার প্রভাব তার বাস্তজীবনেও পড়েছে। ১৯২২ সালে ধুমকেতু পত্রিকায় প্রকাশিত “আনন্দময়ীর আগমনে” শীর্ষক কবিতার কারণে দেশদ্রোহিতার অভিযোগ এনে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়াও যুগবাণী, বিষের বাঁশি, ভাঙার গান সহ আরো অনেক গ্রন্থ, কবিতা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় তখন।
নজরুল বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনে ছিলেন বলিষ্ঠ কন্ঠস্বর। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের নেতা পূর্ণচন্দ্র জেল মুক্তি পেলে কবি তাকে স্বাগত জানিয়ে লিখেন…
জয় বাংলার পূর্ণচন্দ্র, জয় জয় আদি-অন্তরীণ!
জয় যুগে-যুগে-আসা-সেনাপতি, জয় প্রাণ আদি-অন্তহীন!
পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধু “জয় বাংলার পূর্ণচন্দ্র” থেকেই বাংলাদেশের “জয় বাংলা” স্লোগানটি নিয়েছিলেন।
কবির এই বিদ্রোহী মনোভাব যেমন খাতায় কলমে তেমন সামনাসামনিও। একবার কবি সুফিয়া কামালের বাসায় গিয়েছিলেন। গানের আসরে সে এক গোয়েন্দাকে উদ্দ্যেশ্য করে বলেছিলেন “তুমি টিকটিকি, জানি ঠিকঠিকিই” রাগে অপমানে গোয়েন্দা উঠে চলে গেলে সুফিয়া কামাল তাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন আপনি জানলেন কীভাবে উনি গোয়েন্দা? নজরুল বলেছিলেন ” গায়ের গন্ধে, বড়কুটুম যে!
নজরুল তার সারাজীবনে এভাবেই বিদ্রোহ করে গেছেন, প্রেমিকার প্রতি বিদ্রোহ করে কবি লিখেছিলেন “তুমি সুন্দর তাই চেয়ে থাকি প্রিয় একি মোর অপরাধ?”। এছাড়াও সে কতটা অসাম্প্রদায়িক ছিলেন তা তার লেখনীতে প্রমানিত। তার কাছে সব সময় মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান।
সেয় হয়ছে।